এলপি গ্যাসের দাম নিয়ন্ত্রণে নেই তদারকি, একেক জায়গায় একেক দাম
রিয়াজ উদ্দিন:
ভোক্তা পর্যায়ে বেসরকারি খাতের তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম কেজিতে কমল ৩ টাকা ৩০ পয়সা। চলতি জুলাইয়ে ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৩৬৪ টাকা। গত মাসে দাম ছিল ১ হাজার ৪০৩ টাকা। অর্থাৎ জুলাইয়ে ১২ কেজিতে দাম কমেছে ৩৯ টাকা।বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) গত বুধবার (২ জুলাই) সন্ধ্যা থেকে কার্যকরের কথা থাকলে শহরে বা বিভিন্ন উপজেলায় এখনো আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে ১২ কেজি এলপিজি। একাধিক খুচরা ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
খুচরা ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ‘লাফস, সান, বসুন্ধরা ও আই গ্যাসের দাম ৩০-৪০ টাকা কমিয়েছেন কিছু কিছু ডিলার। বাকি সব গ্যাসের দাম আগের দামেই বিক্রি করছেন ডিলাররা।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন কোম্পানির নিয়োগকৃত ডিলাররা তাঁদের খেয়াল-খুশি মতো সিলিন্ডারের দাম নিচ্ছেন। দু-চারটি কোম্পানির গ্যাসের দাম কিছুটা কম নিলেও বেশিরভাগ গ্যাসের দাম আগের মতোই রয়ে গেছে। এমনকি প্রতিটি এলপিজি বিক্রি করা দোকানে নির্ধারিত মূল্যতালিকা প্রদর্শনেরও নির্দেশনা থাকলে-ও দাম তা মানা হচ্ছে না। এক্ষেত্রে খুচরা ব্যবসায়ীরা দুষলেন ডিলারদের। তারা বলছেন, ডিলার সবাই সিন্ডিকেট করে দাম এক জায়গায় নিয়ে আসে। এতে ভোক্তাদের কথার সম্মুখীন হতে হয় তাদের।
গ্রাহকদের অভিযোগ, দাম কমেছে বলা হলেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন। ১৪৫০- ১৫০০ টাকার নিচে কোন গ্যাস নেই।
পূর্ব কলাতলী মেম্বারের ঘাটা এলাকার মুদির দোকান ব্যবসায়ী ফৌজুল করিম বলেন, ‘এক সময়ের ৮০০ টাকার গ্যাস সিলিন্ডার এখন কিনতে হয় ১৫০০ টাকা। টোটাল গ্যাসের দাম আরও বেশি।’
চন্দ্রিমা আবাসিক এলাকার হোটেল সায়মনে চাকুরীজীবি ফরহাদ বলেন, ‘গত মঙ্গলবার আই গ্যাস নিয়েছি ১৪৭০ টাকায়।’
শহরের বাহারছড়া এলাকার শিক্ষানবিশ আইনজীবী রোকন আরা বলেন, ‘গত বুধবার সাহিল এন্ড সোহা এন্টারপ্রাইজ থেকে আই গ্যাস নিয়েছি। দাম নিয়েছে ১৪৫০ টাকা।’
শহরের কলাতলী এলাকায়, মেরিন ড্রাইভ সড়ক, চন্দ্রীমা আবাসিক, টেকপাড়া, ঘোনার পাড়া, বৈদ্যঘোনা, নুনিয়া ছড়া, লারপাড়া, বাস টার্মিনাল, জেল গেইট, বাংলা বাজার, লিংক রোডসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় ১২ কেজি দামের এলপি গ্যাস ১৪৫০-১৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে জানা গেছে।
বাজারে, বেক্সিমকো, টোটাল (সরকারি), বিএম এনার্জি, যমুনা, ওমেরা, জেএমআই, পেট্রোম্যাক্স, পদ্মা, ফ্রেশ, ডেলটা, আই গ্যাস, ই উ নি গ্যাস, ইউনিভার্সেল, ইউরো, লাফস, সান, বিন হাবিবসহ মোট ২৬ টির মতো এলপি গ্যাস রয়েছে।
বাহারছড়া বাজারের ব্যবসায়ী সাহিল এন্ড সোহা এন্টারপ্রাইজ’র প্রোপাটর শফিউল আলম বলেন, ‘বৃহস্পতিবার লাফস গ্যাস ১৩৬০ টাকা, সান ১৩৬০, বসুন্ধরা ১৩৭০ এবং আই গ্যাস ১৩৬০ দামে কিনতে হয়েছে। তিনি বলেন, এ দামের উপর সার্ভিস ও গাড়ি ভাড়া যোগ করে ৫০ টাকা বাড়তি নিতে হয়।’
কস্তুরা ঘাট এলাকার ব্যবসায়ী এহসান ট্রেডার্স’র স্বত্বাধিকারী মাসুদ বলেন, ‘১২ কেজির সিলিন্ডারে একটু ঝামেলা থাকায় বড় সাইজের গ্যাস বিক্রি করি। তিনি ৩৫ কেজি ওজনের এলপিজি ৪১০০ টাকা এবং ৪৫ কেজি ওজনের সিলিন্ডার ৫ হাজার টাকা বিক্রি করছেন বলে জানায়।’
ফ্রেস কোম্পানির ডিলার মোহাম্মদ শাহাদাত বলেন, ‘সরকার যে দাম বেঁধে দিয়েছেন সেই দামেই আমরা বিক্রি করছি। ১৩৫৮- ১৩৫৫ টাকায় কেনার পর গাড়ি ভাড়াসহ ১৪০০ টাকা পর্যন্ত দাম পড়ে। এখন সরকার দাম নির্ধারন করেছেন ১ হাজার ৩৬৪ টাকা। তাহলে প্রতি সিলিন্ডারের আমার লোকসান গুনতে হচ্ছে ৩৫-৪০ টাকা।
তিনি বলেন, ‘এক সময় কক্সবাজারের ডিলার ছিল ১৫ জনের মত। এখন কমতে কমতে ৩-৪ জন আছে। কয়েকমাস পর তারাও থাকবে না।’
জেলা এলপিজি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সরওয়ার আলম বলেন, ‘কিছু কিছু জায়গায় বাড়তি দাম নেওয়া হচ্ছে এমন অভিযোগ পেয়েছি। কোম্পানি থেকে বের হওয়ার পর গ্রাহকদের কাছে যাওয়া পর্যন্ত পরিবহন খরচ, মজুরি, দোকান ভাড়া ইত্যাদি খরচ পড়ে। এজন্য ৫০ টাকা হয়তো বাড়তি নিতে পারে। কিন্তু, এর বেশি নিলে প্রশাসন অভিযান পরিচালনা করো ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান তিনি।’
জানতে চাইলে ভোক্তা অধিকার কক্সবাজারের সহকারী পরিচালক হাসান আল মারুফ দৈনিক কক্সবাজার’কে জানান, ‘ভোক্তাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত জুন মাসে কয়েকটি এলাকায় অভিযান চালানো হয়েছিল। অভিযানে মূল্য তালিকা প্রদশর্ন না করা ও বেশি দামে গ্যাস বিক্রি করায় কয়েকটি দোকানকে জরিমানা করা হয়েছে।’
তিনি আর-ও বলেন, ‘বিইআরসি প্রতি মাসে গ্যাসের দাম নির্ধারণ করে দেয়। জুলাই মাসের শুরুতেও দাম নির্ধারন করেছেন। এখন কোনো ভোক্তা যদি লিখিত অভিযোগ দেন বা কোনো ব্যবসায়ী নির্ধারন দামের চেয়ে বেশি নিচ্ছেন এমন তথ্য দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো: শাহিদুল আলম বলেন, ‘আমাদের নিয়মিত অভিযান চলমান আছে। গ্যাসের দাম বেশি নিচ্ছে- এমন তথ্য পেলে অভিযান চালানো হবে।’