ঠাকুরগাঁওয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূকে হত্যা, পরিবারের সবাই পলাতক।
মোঃ মামুন অর-রশীদ, ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধিঃ ঠাকুরগাঁও সদরের রহিমানপুর ইউনিয়নের শাহানাজ বেগম (২০) নামে এক অন্ত:সত্ত্বা গৃহবধূকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার পর থেকে গৃহবধুর স্বামী বিশাল রহমান (২২), ফারুক হোসেন (শ্বশুর), দুলালি (শাশুড়ী) সহ বাড়ির লোকজন সবাই পলাতক রয়েছে।
শুক্রবার রাতে সদর উপজেলার রহিমানপুর ইউনিয়নের উত্তরপাড়া গ্রামে এ ঘটনাটি ঘটে। তিনি ৩ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন৷
এলাকাবাসী জানান, বছর দেড়েক আগে বিশাল রহমানের সাথে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার পলাশবাড়ী ইউনিয়নের বাদামবাড়ি গ্রামের শাহজাহানের মেয়ের সাথে বিয়ে হয়। বিয়ের পরপরই তার শ্বশুর, শাশুড়ি ও দেবরের সাথে প্রায় ঝগড়া বিবাদ লেগে থাকতো।
গতকালকেও ওই বাড়িতে রাত বারটা পর্যন্ত ঝগড়াঝাঁটি চলতে থাকে এক পর্যায়ে উক্ত গৃহবধুকে গলা টিপে রাত ১:০০ টার দিকে হত্যা করে।
নিহত শাহানাজের বাবা বলেন, আমার মেয়ের সাথে বছর দেড়েক আগে বিশাল রহমানের সাথে রিলেশন ছিল। পরে আমার মেয়েকে বিয়ে করার জন্য পালিয়ে নিয়ে আসে। আমি বিয়ে দিতে চাইনি কিন্তু ছেলের বাপ বলেন, বিয়ে দেন,ভালো হবে, আপনার মেয়ে সুখে থাকবে কোন সমস্যা নাই।
দেড় লক্ষ টাকা যৌতুকের বিনিময়ে কাজীর মারফতে বিয়ে হয়। আমি প্রথমে পঞ্চাশ হাজার টাকা দিই পরবর্তী ৫০ হাজার টাকা দিই। বিয়ের কিছু দিনের মধ্যে ছেলের মা এবং ভাই আমার মেয়েকে মার দিয়ে চৌকির তলে ঢুকিয়ে দিয়েছিল। পরে আমার মেয়ে পালিয়ে আমার বাড়িতে যাই। ছেলের বাবাসহ ওকে নিয়ে এসেছিল। তিনি আরও অভিযোগ করেন, আমার মেয়েকে এর আগে যারা মারধর করেছিল আজকে আমার মেয়েকে তারা হত্যা করেছে। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার মেয়ের হত্যাকান্ডের বিচার চাই।
এদিকে মেয়ের মা লাভলী আক্তার কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন,” মোর মাক যেঁংকরে মারিছে গে উঁমাক অঁংকরে মারোগ গে অর্থাৎ আমার মেয়েকে যেভাবে মেরেছে, সেভাবে যেন তাদের মারা হয়। মেয়ের মা আরো বলেন, দীর্ঘ দেড় বছর ধরে আমার মেয়েকে অনেক নির্যাতন করেছে আমি তাদের ফাঁসি চাই।”
নিহত শাহানাজের খালা বিলাপ করতে করতে বলছিলেন, “আমার মেয়ের হত্যার বিচার চাই, ফাঁসি চাই।”
৮নং রহিমানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান হান্নু বলেন, গতরাতে স্বামী স্ত্রী রাত বারোটা পর্যন্ত ঝগড়া করে তারপর রাত একটা থেকে দেড়টা নাগাদ মৃত্যুর ঘটনাটি ঘটেছিল বলে মনে করছি। আমি মনে করি, এটি স্বাভাবিক মৃত্যু নয় তবে মেয়ের পরিবারের অভিযোগ আছে, মেয়েটিকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করা হয়েছে বা মেরে ফেলা হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তদন্ত করছে। এ পরিবারের কেউ নেই, ছেলে নেই, বাবা নেই, মা নেই ছোট ভাই নেই অর্থাৎ কোন সদস্যই বাড়িতে নেই সবাই পলাতক।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(সদর সার্কেল) মিথুন সরকার বলেন, “আমরা খবর পাওয়ার পর পর এখানে আছি। আসার পর পর আমরা দেখি ও মেয়েটাকে মেরে ফেলে রাখা হয়েছে। তার বয়স বিশ বছর। লাশের সুরতহাল করে এখন লাশ পোস্টমর্টেমের জন্য থানায় নিয়ে যাচ্ছি এবং হত্যাকাণ্ডের সাথে যারা জড়িত তাদেরকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি আরও বলেন, লাশ যেখানে পাওয়া গেছে সেখানে পরিবারের কাউকে পাওয়া যায়নি সবাই পলাতক কাজেই বলা যাচ্ছে এটি একটি হত্যাকান্ড। মাডারের কারণটা কি তা পোস্টমর্টেম করার পর এটি প্রোপার্লি বলা সম্ভব।
সদর থানার অফিসার ইনচার্জ এবিএম ফিরোজ ওয়াহিদ বলেন, মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। এখনো অবদি কোন অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।