যৌতুক দিতে না পারায় গৃহবধূকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন, আটক -০৩।
মোঃ মামুন অর-রশীদ, ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধিঃ
যৌতুকের দাবি পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় পাষন্ড স্বামী ও সতীন রোজিনা বেগম নামে একজন নারীকে বেধরক মারপিট করে সমাজে কূলটা বানাতে মাথার চুল কেটে দিয়েছে, শুধু তাই নয়, লাঞ্চনার শিকার ওই নারী জ্ঞান হারিয়ে ফেললে তারা তাকে গোপন করতে বাড়ির পাশের বাঁশ ঝাড়ে মৃত ভেবে ফেলে আসে।
পরে খবর পেয়ে পুলিশ বাঁশঝাড় হতে ওই নারীকে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে দেয়। এ ঘটনায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে স্বামী ,সতীন ও সতীনের ছেলেসহ ৩ জনকে আটক করেছে।
বৃহস্পতিবার তাদের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
জানা যায়, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মধুপুর ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের আফসার আলীর ছেলে নূর আলম ৩ বছর আগে রানীশংকৈল উপজেলার গোগর সরকারপাড়া গ্রামের আব্দুল হকের ছেলে রোজিনা বেগমকে বিয়ে করে। বিয়ের পর তাকে নিয়ে ঠাকুরগাঁও শহরের ভাড়া বাসায় বসবাস করতে থাকে নূর আলম। এদিকে ব্যবসার টাকা লাটে উঠলে পুনরায় ব্যবসা চালু করার জন্য দেড় লক্ষ টাকা যৌতুক দাবি করে রোজিনার কাছে। কিন্তু পিতৃ মাতৃহীন রোজিনা স্বামীর শত নির্যাতন সহ্য করতে থাকে।
এদিকে মঙ্গলবার(৮ আগষ্ট) রাতে নূর আলম রোজিনার ভাড়া বাসায় উঠে এবং যৌতুকের টাকার জন্য চাপ দেয়।
বুধবার সকালে নূর আলম রোজিনার মোবাইল ফোন নিয়ে গ্রামের বাড়ি মধুপুর গ্রামে চলে আসে। বিষয়টি টের পেয়ে রোজিনাও নূর আলমের গ্রামের বাসায় আসে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে নূর আলম ও তার প্রথম পক্ষের স্ত্রী এবং তার ২ ছেলে।
এ নিয়ে কথাবার্তার এক পর্যায়ে নূর আলম মাথার চুল ধরে তাকে কাবু করে এবং তার প্রথম স্ত্রী রুনা ও তাদের ২ ছেলে রোজিনাকে বেধরক মারপিট করে। শুধু তাই ,রোজিনা যাতে পরবর্তীতে ওই বাড়িতে আসতে না পারে সেজন্য সমাজে কূলটা বানাতে তার মাথার চুল কাচি দিয়ে কেটে দেয় সতীন রুনা বেগম, তারপরও থামেনি তাদের নির্যাতন।এ পর্যায়ে রুনা বেগম জ্ঞান হারিয়ে ফেললে মৃত ভেবে তার লাশ গোপনের উদ্দেশ্যে বাড়ির পাশে বাঁশ ঝাড়ে ফেলে দেয় তারা।
এদিকে খবর পেয়ে রুহিয়া থানার পুলিশ একটি বাঁশঝাড় হতে গৃহবধূ রোজিনাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে দেয়। এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। বুধবার রাতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে রোজিনার স্বামী নূর আলম, সতীন রুনা বেগম ও সতীনের ছেলে সুজনকে আটক করেছে।
রুহিয়া থানার ওসি সোহেল রানা জানান, গৃহবধূকে মারপিট করে মাথার চুল কেটে দিয়ে বাঁশঝাড়ে ফেলে রাখার ঘটনায় পুলিশ ঘটনাস্থল হতে গৃহবধূকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে দেয়। রাতেই নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে।